bangla golpo | (জনক)- লেখকঃ মোঃ নাজমুল আকন
bangla golpo
[এক]
আ |
জ সোমবার,
আমি নিজেকে যতটুকু অনুভব করে বুঝছি আর অল্পদিনই বাঁচবো। কিছুক্ষন পর পর রক্ত বমি হচ্ছে। প্রচন্ড যন্ত্রনা হচ্ছে মাথার ভেতরে।
ইচ্ছে করছে নিজেকে শেষ করে দেই। এত তিব্র ব্যাথা আর সহ্য হয়না। ৬/৭ মাস যাবত বিছানায় পরে আছি।
বাবার এক মাত্র সন্তান আমি।
তাই ব্যাংকে জমানো সকল টাকা আমার পেছনেই উড়িয়েছেন। কিন্তু আমার রোগ আগের মতই রয়ে গেল বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি।
চোখের পানিতে বালিশের অর্ধেকটা কালো হয়ে গেছে। শরীরটা একেবারে নিস্তেজ হয়ে আছে। বিন্দুমাত্র শক্তি পাচ্ছিনা।
বাবা আজ আমাকে নিয়ে ছুটছেন হাসপাতালের দিকে। রিক্সা দ্রুত চলছে হালকা ঝাকুনিতে কলিজা সহ ব্যাথা করছে। দাতে দাত চেপে সহ্য করছি সে ব্যাথা।
বাবার চোখে পানি ছল ছল করছে।bangla golpo
আমার জন্য বাবার কতইনা কষ্ট হচ্ছে তা ঢের বুঝতে পারছি।
বাবার ব্যাবসা একেবারে মাটিতে ঠেকেছে। মদ্ধবিত্ব পরিবার আমাদের। বাবার ব্যাবসার হাল ধরার কথা ছিলো আমার। কিন্তু এখন বাবার ব্যাবসা চুরমার হয়ে যাচ্ছে আমার চিকিৎসারর খরচ পূরন করতে করতে।
শহর এর আলো গুলো এখন সব অচেনা ঝাপসা লাগছে। আমি বাবাকে অনেক বার বললাম বাবা আমি আর বেশিদিন বাঁচবোনা তুমি আমাকে নিয়ে এতটা ব্যাস্ত হইয়োনা।
বাবা বললেন ছেলের মৃত্যু নিজের চোখে দেখতে চাইনা।
শরিরের শেষ রক্তটুকু বিক্রি করে হলেও তোর চিকিৎসা করাবো।
কিছুক্ষণ পর এসে পৌছলাম হসপিটাল এর সামনে। এখানে হাজার হাজার মানুষ এর ভির। আমাকে দ্রুত জরুরী বিভাগে নেওয়া হলো।
নার্স বললেন ডাক্তার এখনও আসেননি। রাস্তায় জ্যাম এর কারনে আসতে অনেকটা সময় লাগছে। আমাকে অক্সিজেন মাক্স লাগিয়ে শুইয়ে দেয়া হলো। এখনও বুকে খুব ব্যাথা করছে।
বাবা বারান্দায় চলে গেলেন,
নার্স একটা ইনজেকসন দিলেন। তারপর তিনি তার প্রয়োজনীয় যন্ত্র গুছাতে লাগলেন।
ব্যাথা বিন্দুমাত্র কমেনি, পুনঃপুন বুকের ভেতরে তিব্র ব্যাথা উপলদ্বি করছি। ঠিক কখন ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই।
ঘুম ভাঙ্গলো যখন, দেখলাম বাবা পাশেই বসে আছেন।
আমাকে জাগতে দেখেই বাবা বললেন কেমন লাগছে এখন?
আমি কোন কথা বললাম না, কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা।
ভাবছি কি হবে।
আমি না হয় কিছুদিন বাদে মারাই যাব, কিন্ত বাবা কিভাবে থাকবেন
তার জমানো টাকা গুলোতো আমার জন্যই শেষ করলেন।
ব্যাবসা এখন পুরোপুরি বন্ধ, বাবা বয়স তো ষাট পেড়িয়ে গেল।
এমনিতেই ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত।
বেশি কিছু খেতে পারেন না। bangla golpo
আজো মনে পরে, সেই ছোট বেলায় মাকে হারিয়েছি। তখন সবে মাত্র দুই বছর বয়স। মাকে হারিয়ে আমি যেন পৃথিবীর অর্ধেকটা অন্ধকার হয়ে উঠছিলো।
এখনও মনে পরে, মায়ের সেই মায়া ভরা মুখখানি। বাবা আমাকে আগলে রেখেছিলো। পরবর্তিতে বিয়েটাও করেননি, আমার কস্ট হবে ভেবে।
যখন মাঠে আমি ফুটবল ক্রিকেট খেলতাম। গ্যালারীতে বসে থেকে বাবা আমাকে উৎসাহ যোগাতেন। আমাকে তার সাইকেলে করে স্কুলে পৌছে দিতেন। স্কুল কলেজ ভার্সিটি সব সময় আমাকে নিয়েই তার ভাবনার অন্তঃনেই। সেই দিন গুলো কত দ্রুত কেটে গেল। মায়ের সব কস্ট ভুলে গিয়েছিলাম বাবার ভালোবাসায়। বাবার বন্ধুত্বপূর্ন আচরণে আমার সকল সমস্যা গুলো নির্মুল করতে অনেকটাই সহজ হয়েছিল। ছোটবড় আবদার গুলো খুব গুরুত্ব দিয়ে শুনতেন, এখনও শোনেন। তবে এখন আর আবদার করে হয়ে ওঠেনা। সাধ্যমত চেস্টা করতেন আমার সাধ গুলো পূরন করতে।
যখন অসুস্থ হতাম তখন বাবা সারারাত ভর জেগে আমার সেবা করতেন।
"নাহ আমাকে আবার সুস্থ হয়ে উঠতেই হবে বাবাকে আমাকেই দেখতে হবে" আমার অবচেতন মনে বলে উঠলো। শেষ বয়সেও তাকে এতো কস্ট সহ্য করতে দেয়া যাবেনা।bangla golpo
যেভাবেই হোক বাবাকে সাহায্য করতেই হবে। বাবার দুঃসময়ের কারন যেহেতু আমি, আমাকেই কিছু একটা করতে হবে।
বাবা বলে উঠলেন কি ভাবছিস এতো?
আমি বললাম কিছুনা বাবা!
তুমি খেয়েছো কিছু?
বাবা বললেন আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা।তুই সুস্থ হয়ে ওঠ তাতেই আমার শান্তি।
বাবার চোখের পানি ছল ছল করছে এখনও। আমি বাবাকে বললাম বাবা আমি নিশ্চই ঠিক হয়ে যাব। আমাকে ঠিক হতেই হবে। আমার অনেক কিছু করা এখনও বাকি।
বাবা কিছু বলছেন না, সুধু নিরবে চোখের জল ফেললেন।
বাবাকে কোনদিন কাঁদতে দেখিনি আমি। হয়তো বাবাদের কাঁদতে নেই, বাবাদের হতে হবে গম্ভীর এটাই বুঝি সমাজের চরম নিয়ম।
সেই নিয়ম ভেঙে বাবা আজ কাঁদছে। এযে ব্যামানান কান্নাbangla golpo, বাবাদের তো কান্না মানায়না
তাদের থাকবে রক্তবর্ণ চোখ, চাহনিতে থাকবে নির্জল দৃষ্টি।
ব্যাথিত মন নিয়ে আর বাবার দিকে তাকাতে পারছিনা।
জানালার দিকে তাকিয়ে আছি। বিকেলের রক্তিম আকাশ যেন আমার বুকের ভেতরের ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাওয়া অবস্থা ব্যাক্ত করছে।
পানকৌড়ী গুলো উরে যাচ্ছে নিজের ঘরে। সুধু আমিই ফিরতে পারছিনা, জানিনা আদৌ ফিরতে পারবোকিনা।
পুরনো দিন গুলোর কথা খুব মনে পরছে এখন। থমকে যাওয়া সৃতি গুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। ছোট ছোট সৃতিগুলো নানান প্রশ্ন নিয়ে উদ্ভাবিত হচ্ছে,
কেন হলো?
এমন আমার সাথেইবা কেন এমন হতে হলো
? চোখের কোন বেয়ে একফোঁটা পানি পরলো। নাহ আমি কাঁদছিনা তবুও আমার চোখ ভিজে আছে।
সবে মাত্র মাস্টার্স শেষ করেছিলাম,
আশা ছিলো বাবার ব্যাবসাটার হাল ধরবো। অনেক তো হলো,
বাবাকে বলেছিলাম সেদিন। বাবা তোমার কি ইচ্ছে বলো আমি কি করবো চাকুরী?
নাকি ব্যাবসা?
নয়তো কৃষিকাজ?
যাই বলো তাতেই আমি রাজি। বাবা হেসে উত্তর দিলেন তুই জিবিকার জন্য যাই করিস তাতে আমার কোন ভুরুক্ষেপ নেই। ইচ্ছে নেই জানার, তবে আমি চাই আমার ছেলে হবে সুশিক্ষিত এবং নিষ্ঠাবান। সমাজে ভালো মানুষগুলোর খুব অভাব।
যেদিন থেকে শিক্ষিতরা দুর্নিতি করতে শুরু করলো, সেদিন থেকেই সমাজ হয়ে উঠেছে বিষাক্ত।
আমি চুপ থেকে বাবার কথাগুলো শুনছিলাম।
সেদিন সুধু ভাবছিলাম কিভাবে বাবার স্বপ্ন গুলোকে বাস্তবে রূপ দেয়া যায়।
তাছারা আমাদের আত্নিয় স্বজন পাড়া পড়শিরা সব সময় বাবাকে নিয়ে গর্ব করেন, কারন তিনি ন্যায় নিষ্ঠাবান ব্যাক্তি।
তার বড় উদাহরণ হলো, ভূমি অধিদফতরের চাকরি করার সময় বাবা দেখলের অনৈতিক কাজের ছড়াছড়ি। বাবা থামাতে চেয়েছিলেন বারংবার। কিন্ত বার বার তাকে বদলি করা হতো,
২ মাস না যেতেই আবার বদলি করে দেয়া হতো। কারন বাবা অনিয়ম দেখতে পারতেন না, দুর্নিতি দেখতে পারতেন না।
অফিসে ফাইলের আগে টাকা আসতো, তবেই সাইন হতো ফাইল।
ফাইলেও থাকতো নানান অনিয়ম।bangla golpo
অনেকবার আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোও হয়েছিলো। তবুও তিনি নিতির জন্য লরেছেন, সকল অনিয়ম এর বিরুদ্ধে।
অভিযোগ করেছিলেন অনেক বড় কর্মকতার কাছেও। কিন্তু তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো বাবাকে বদলি করিয়ে দিয়েছিলেন।
অবশেষ কিছু থামাতে না পেরে চাকরির ইস্তফা দিয়ে চলে আসলেন।
মাথা নিচু করে বাঁচার নাম জীবন নয়। জীবনকে সম্মান এবং নিষ্ঠার সাথে চলতে শিখিয়েছেন বাবা আমাকে। আমিও তার আদর্শে নিজেকে গড়তে চেস্টা করেছি।
বাবা থমকে যায়নি, উঠে দারিয়েছেন, নিজেই ব্যাবসা দার করিয়েছেন। তাতেই মোটামুটি আমাদের দিন খুব ভালোই কেঁটে যেত।
জানালার থেকে চোখ ফিরিয়ে আনলাম।
চারোধারে এখন আধারের ঘনঘটা। সন্ধা নেমে গেছে অনেক আগেই। ডাক্টার আসলেন, আমাকে দেখলেন এবং কিছু পরিক্ষা নিরিক্ষা করাতে বললেন।
বাবা এখনও পাশেই বসে আছেন।
হসপিটাল রুমের পাখাটা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরছে।
লাইটের তিব্র আলো গুলো চোখ ধাঁদিয়ে ওঠে।
গলগল করে আবারো রক্ত বমি করলাম। তারপর আর কিছু মনে নেই। যখন চোখ মেললাম তখন পরদিন দুপুর। বাবা পাশেই বসে আছেন। অনেকটা সময় কেটে গেছে কিন্ত ব্যাথা এখনও কমেনি। এই ব্যথা বোধহয় কখনই কমবে না। এতো তিব্র কস্ট সহ্য করাটাই দুঃসহ।
পুরনো ভাবনা গুলো বারবার উঁকি দিচ্ছে মনের ভেতরে। আর বুকের ব্যাথা তিব্র থেকে আরো তিব্র হয়ে উঠছে।
কোন মন্তব্য নেই